মহাকাশের আইন
(Space Laws)
আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনের সাথে সবাই পরিচিত। সকল আইনের একটা সীমারেখা থাকে এবং সাধারনত সমঝোতার মাধ্যমে গৃহীত হয়। যেমন জাতীয় আইনের সীমারেখা থাকে ভুমি, সাগর ও আকাশ দিয়ে । জাতিসংঘের তত্তাবধানে ১৯৬০/৭০ এর দশকে বিভিন্ন মহাকাশ সংক্রান্ত আইন প্রনয়ন , গৃহীত এবং কার্যকর করা হয়। মহাকাশ আইনের মূলনীতি হল, মহাকাশকে শান্তিপুর্নভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং পারমাণবিক বোমা বা অন্যান্য মারাত্মক বোমা পরিবহন, পরীক্ষা , ব্যাবহার নিষিদ্ধ করন ।
মহাকাশের সীমানা – যেকোনো আইন প্রয়োগ করার জন্য সীমানা নির্ধারণ করতে হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত মহাকাশের সীমানা হিসেবে গন্য করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সবদেশ এই সংজ্ঞাতে একমত নয়, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে এই সীমানা ধরা হয় ৮০ কিলোমিটার । আকাশ সংক্রান্ত আইন , অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন থেকে পৃথক করার জন্যই মুলত মহাকাশের সীমানা সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অন্যান্য আইনের সাথে মহাকাশ আইনের পার্থক্য হল , সাধারন আইন প্রয়োগ করার জন্য সব দেশের কিছু সংস্থা থাকে (যেমন পুলিশ, বিমান বাহিনী ) কিন্তু মহাকাশে আইন প্রয়োগ করা কঠিন , আসলে অসম্ভব, সুতরাং মহাকাশ আইনের প্রয়োগ নির্ভর করে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের সহযোগিতার উপর।জাতিসংঘের অধিনে কোপাস কমিটি (Committee on the Peaceful Uses of Outer Space) শান্তিপুর্ন ভাবে মহাকাশ ব্যাবহারের উদ্দ্যেশে কাজ করে যাচ্ছে।
মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, চুক্তি বা সমঝোতা রয়েছে। নিচে শুধুমাত্র ৫টি উল্লেখযোগ্য আইনের সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হল
১। মহাশূন্য সন্ধি ১৯৬৭ (Outer Space Treaty 1967)
২। উদ্ধার চুক্তি ১৯৬৮ (Rescue Agreement 1967)
৩। দায় চুক্তি ১৯৭২ (Liability Convention 1972)
৪। নিবন্ধন চুক্তি ১৯৭৬ (Registration Convention 1976)
৫। চাঁদ চুক্তি ১৯৮৪ (Moon Agreement 1984)
মহাশূন্য সন্ধি ১৯৬৭ (Outer Space Treaty 1967)
জাতিসংঘের তত্তাবধানে ১৯৬৮ সালে এই আইন কার্যকর করা হয়। মহাশূন্য সন্ধি ১৯৬৭ মহাকাশ সংক্রান্ত প্রথম আইন এবং পরবর্তীতে মহাকাশ সম্পর্কিত অন্যান্য আইনের জন্য মৌলিক কাঠামো হিসেবে কাজ করে। এই আইনের পুর্ন নাম “Treaty on Principles Governing the Activities of States in the Exploration and Use of Outer Space, including the Moon and Other Celestial Bodies”. এখনো পর্যন্ত ১১১ টি দেশ এই চুক্তিতে সাক্ষর করেছে।
আইনের গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা
মহাশূন্য সকলের এবং মহাশূন্যের ব্যাবহার ও আনুসন্ধান সকল দেশের মঙ্গলের তরে ব্যবহৃত হবে
মহাশূন্য সকল রাষ্ট্রের ব্যাবহারের জন্য উন্মুক্ত
মহাশুন্যে কোন রাষ্ট্র নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি অথবা দখল করতে পারবে না
কোন রাষ্ট্র মহাশুন্যের কোথাও আণবিক বোমা রাখতে পারবে না
চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ শুধুমাত্র শান্তিপুর্ন কাজে ব্যবহৃত হবে
নভোচারীরা মানবজাতির দূত হিসেবে বিবেচিত হবেন ।
উদ্ধার চুক্তি ১৯৬৮ (Rescue Agreement 1967)
উদ্ধার চুক্তি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় ১৯৬৭ সালে এবং ১৯৬৮ সালে কার্যকর করা হয়, এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ৯৮টি। । এই চুক্তির মুল নীতিমালাগুলু নিচে বর্ননা করা হল
জরুরী অবস্থায় মহাকাশচারীদের উদ্ধার এবং মুল দেশে প্রত্তাবর্তন
দুর্ঘটনা অথবা জরুরী কারনে যদি মহাকাশযান বা যানের অংশ অন্য কোন দেশে পতিত হয় তাহলে সেই দেশ মুল দেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ফেরত প্রদান করবে
দুর্ঘটনা বা জরুরী কারনে যদি মহাকাশযান বা মহাকাশচারীদের অন্য কোন দেশে অবতরন করতে বাধ্য হয় তাহলে সেই দেশ এই তথ্য মুল দেশকে অবহিত করবে এবং জাতিসংঘের মহাসচিবকেও অবহিত করবে।
দায়বদ্ধতার চুক্তি ১৯৭২ (Liability Convention 1972)
মহাকাশযান উড্ডয়ন বা পরিচালনার সময় যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, সেই ধরনের পরিস্থিতির কথা ভেবেই এই চুক্তি। এই চুক্তি অনেকটা গাড়ির ইনসিওরেন্সএর মতই। এই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে তার নিজেদের দেশ থেকে উৎক্ষেপণকৃত রকেট বা নিবন্ধনকৃত কোন মহাকাশযানের জন্য দায়বদ্ধ করা হয়েছে, ৯৬ টি দেশ এই চুক্তিতে সাক্ষর করেছে। । এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ হল
মহাকাশযানের ত্রুটির জন্য যদি ভুমিতে বা আকাশে অবস্থিত বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে উৎক্ষেপণকারি রাষ্ট্র এই ঘটনার জন্য দায়বধ্য হবে
যদি তৃতীয় কোন দেশের মহাকাশযান ক্ষতিগ্রস্ত হয় , তৃতীয় রাষ্ট্রের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা হবে প্রথম দুটি রাষ্ট্রের যে কোনো একটির দোষের উপর অথবা তাদের দোষের উপর ভিত্তি করে।
যদি দুই বা ততোধিক দেশ যৌথভাবে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে তাহলে তারা যৌথভাবে এবং পৃথকভাবে দায়বদ্ধ থাকবে ।
নিবন্ধন চুক্তি ১৯৭৬ (Registration Convention 1976)
নিবন্ধন চুক্তি জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে গৃহীত হয় ১৯৭৪ সালে এবং ১৯৭৮ সাল থেকে কার্যকর করা হয়, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ৭১।। এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ হল
রাষ্ট্র কোন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলে যথাযতভাবে নিবন্ধন করবে এবং জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করবে
দুই বা ততোধিক রাষ্ট্র একসাথে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলে রাষ্ট্রগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নিবে কোন দেশ নিবন্ধন করবে
রাষ্ট্র জাতিসংঘের মহাসচিবকে মহাকাশযানের কারিগরি তথ্য প্রদান করবে ।
চাঁদ চুক্তি ১৯৮৪ (Moon Agreement 1984)
চাঁদ চুক্তি ১৯৮৪ সাল থেকে বলবত হয়, মাত্র ১৮ টি দেশ এই চুক্তিতে সাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র , রাশিয়া, চিন এখনো এই চুক্তিতে সাক্ষর করেনি। । এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ হলঃ
চাঁদ শান্তিপুর্নভাবে সকল রাষ্ট্রের ব্যাবহার করার জন্য
চাদে হুমকি বা শক্তিপ্রয়োগ বা আক্রমণাত্মক আচরন নিষিদ্ধ। চাদকে ব্যাবহার করে কোন আপরাধমুলক কাজে জড়িত থাকা নিষিদ্ধ
চাদের কক্ষ্যপথে কোন পারমাণবিক বোমা রাখা নিষিদ্ধ
চাদে কোন সামরিক স্থাপনা নিষিদ্ধ
চাদে কোন ধরনের অস্ত্র বা বোমার পরীক্ষা নিষিদ্ধ ।
Reference:
[1] “The Outer Space Treaty.” Available: https://www.unoosa.org/oosa/en/ourwork/spacelaw/treaties/introouterspacetreaty.html.
[2] “Rescue Agreement.” Available: https://www.unoosa.org/oosa/en/ourwork/spacelaw/treaties/introrescueagreement.html#:~:text=The%20Agreement%2C%20elaborating%20on%20elements,to%20launching%20States%20in%20recovering.
[3] “Liability Convention.” Available: https://www.unoosa.org/oosa/en/ourwork/spacelaw/treaties/introliability-convention.html.
[4] “Registration Convention.” Available: https://www.unoosa.org/oosa/en/ourwork/spacelaw/treaties/introregistration-convention.html.
[5] “Moon Agreement.” Available: https://www.unoosa.org/oosa/en/ourwork/spacelaw/treaties/intromoon-agreement.html.
Published Date: 25th April 2024