এক্সো-প্ল্যানেট : ট্রাপিষ্ট -১ (TRAPPIST-1) নতুন পাওয়া ৭টি গ্রহ
নাসা গত ২২ শে ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন ও জার্নালে এই তথ্য প্রকাশ করে। এই প্রথম কোন নক্ষত্র মণ্ডলের চারিপাশে এতগুলো গ্রহের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, মোট ৭ টি গ্রহ এই নক্ষত্রকে কেন্দ্র ঘুরছে। তাদের মধ্যে তিনটি গ্রহ বাসযোগ্য অঞ্চলে (Habitable Zone)অবস্থিত। Spitzer টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই সাতটি গ্রহ সনাক্ত করা হয়েছে, এই গবেষণায় অন্যান্য টেলিস্কোপের মাধ্যমেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে । এই আবিষ্কার একটি রেকর্ড , কারণ এর আগে একই নক্ষত্রে এতগুলো গ্রহ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীদের মতে, সাতটি গ্রহে তরল পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তিনটি গ্রহ যা বাসযোগ্য অঞ্চলে অবস্থিত তাতে তরল পানি থাকার সম্ভবনা আরও বেশি।
পৃথিবী থেকে মাত্র ৪০ আলোক বর্ষ দুরে অবস্থিত এই তারা মণ্ডলীর নাম ট্রাপিষ্ট -১ (TRAPPIST-1) , তারার এই নামকরন করা হয়েছে চিলিতে অবস্থিত মানমন্দিরের টেলিস্কোপর নামানুসারে, The Transiting Planets and Planetesimals Small Telescope (TRAPPIST)। ২০১৬ সালের মে মাসে এই মানমন্দিরের গবেষকরা প্রথম তিনটি গ্রহ সনাক্ত করেন, পরবর্তীতে মহাশূন্যে অবস্তিত Spitzer টেলিস্কোপ ও অন্যান্য ভূমিতে অবস্তিত টেলিস্কোপের মাধ্যমে বাকি গ্রহ সনাক্ত করে। Spitzer টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত ডাটা থেকে বিজ্ঞানীরা সাতটি গ্রহের আকার নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করেন, আকার থেকে গ্রহের ভর ও ঘনত্ব নির্ণয় করেন। ঘনত্বের মান থেকে দেখা যায়, সবকটি গ্রহের কঠিন পৃষ্ঠ রয়েছে ( যেমন রয়েছে পৃথিবী, মঙ্গল, শুক্র, বুধ ) । আরও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে গ্রহের মধ্যে তরল পানির অবস্থান ও পরিমান সম্পর্কে আরও ধারনা পাওয়া যাবে। সপ্তম গ্রহের ভর এখনো অজানা, তবে মনে করা হয়, হয়ত সপ্তম গ্রহ বরফাছিন্ন।
TRAPPIST-1 নক্ষত্র : TRAPPIST-1 একটি অতি শীতল বামন তারা (Ultra-cool dwarf star)। এই নক্ষত্রের আকার, ভর , তাপমাত্রা আমাদের সূর্যের থেকে অনেক কম। TRAPPIST-1 নক্ষতের ভর সূর্যের মাত্র ৮ শতাংশ এবং ব্যাসার্ধ সূর্যের ১১ শতাংশ। TRAPPIST-1 পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাত্র ২৫৫০ ডিগ্রী কেলভিন , আর যেখানে সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৫৭৭৮ ডিগ্রী কেলভিন । এই নক্ষত্রের বয়স প্রায় ৫০ কোটি বছর, আমাদের সূর্যের বয়স প্রায় ৪৬০ কোটি বছর।
আবিষ্কৃত সাতটি গ্রহ তাদের নক্ষত্রকে অনেক কাছ থেকে আবর্তন করে, এমনকি দূরত্বের দিক থেকে বুধ গ্রহ ও সূর্যের মধ্যের দূরত্বের চেয়েও কম। কিন্তু আকারে কম, তাপমাত্রা কম হওয়ায় এত কাছে থাকার পরও এই গ্রহগুলোতে তরল পানি থাকার সম্ভবনা রয়েছে। গ্রহগুলোও একটি আরেকটির খুব কাছে, এমনকি একটি গ্রহ থেকে আরেকটি গ্রহের অনেক কিছুই দৃশ্যমান হবে। একটি গ্রহ থেকে আরেকটি দেখলে মাঝে মাঝে চাঁদের থেকেও বড় দেখাবে।
সবগুলো গ্রহ তাদের নক্ষত্রের সাথে টাইডালি লকড, অর্থ হল , গ্রহের এক পাশ সব সময় নক্ষত্রের দিকে থাকবে, একপাশে সারাজীবন দিন অন্য পাশে সারাজীবন রাত। গ্রহগুলোর আবহাওয়া , জলবায়ু পৃথিবী থেকে অনেক ভিন্ন হবে এইজন্য। হাবল টেলিস্কোপ থেকে পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যে দুটি গ্রহ নক্ষত্রের সবচেয়ে কাছে রয়েছে, সেইগুলো কঠিন পৃষ্ঠের, কারণ গ্রহগুলো থেকে কোন গ্যাস নির্গত হতে দেখা যায়নি।
বিজ্ঞানীরা আশা করেন, ভবিষ্যতে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আরও তথ্য সংগ্রহ করা যাবে, ২০১৮ সালে মহাশূন্যে পাঠানো হবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সংক্ষেপে JWST, JWST অত্যন্ত সংবেদনশীল, এই টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহের রাসায়নিক গঠন, তাপমাত্রা, বায়ুচাপ নির্ণয় করা যাবে, এই তথ্য দিয়ে গ্রহগুলো আসলেই বাসযোগ্য কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গ্রহ পরিচিতি
সাতটি গ্রহকে বর্ণমালা দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে, যেমন, শুরু হয়, b (ছোট হাতের ) থেকে, দূরত্বের দিকে থেকে গ্রহগুলো যথাক্রমে b, c,d, e, f, g, h. সবগুলো গ্রহ ট্রানজিট পদ্ধতিতে সনাক্ত করা হয়েছে। ট্রানজিট পদ্ধতি হল , যখন একটি গ্রহ তার নক্ষত্রের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তখন সামান্য আলো কমে যায়, এই আলো কমে যাওয়ার পরিমাণ হিসাব করে গ্রহের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়। যে তিনটি গ্রহ বাসযোগ্য এলাকায় আছে বলে ধারনা করা হয় তারা হল, e, f, g গ্রহের টেবিল থেকে দেখা যায়, গ্রহগুলোর অবর্তনকাল অত্যন্ত কম, যেমন প্রতহ্ম গ্রহ মাত্র দেড় দিনে একবার পুর্ন আবর্তন সম্পন্ন করে, পর্যায়ক্রমে বাকি গ্রহগুলো ২.৪ দিন, প্রায় ৪ দিন, ৬ দিন, ৯ দিন ১২ দিন এবং সবচেয়ে দুরে থাকা গ্রহ মাত্র ২০ দিনে একবার পুর্ন আবর্তন করে।
Published date: 24.02.2017
তথ্য সূত্র