গালিলিও স্যাটেলাইট নেভিগেশন
বিখ্যাত ইতালিয়ান বিজ্ঞ্যানী গালিলিও গ্যালিলির নামে নামকরন করা এই গ্লোবাল নেভিগেশন সিস্টেম । আমরা সবাই কম বেশি GPS এর সাথে পরিচিত, GPS যুক্তরাষ্ট্রের প্রেরিত স্যাটেলাইট যা পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ ব্যাবহার করে। একি ধরনের গ্লোবাল নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে রাশিয়ার ও ইউরোপের। রাশিয়ার তৈরি ও পরিচালিত নেভিগেশন সিস্টেম হিসেবে রয়েছে গ্লোনাস (GLONASS) এবং ইউরোপের নেভিগেশন সিস্টেম গ্যালিলিও নামে পরিচিত। গালিলিও বেশ আধুনিক স্যাটেলাইট সিস্টেম, পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গা থেকে ৬-৮টি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান সবসময়, এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যেকোন বস্তুর অবস্থান নিখুতভাবে কয়েক সেন্টিমিটারের মধ্যে নির্ণয় করতে পারে।
শুরু – ২০০৫ সালে প্রথম পরিক্ষ্যামুলক ভাবে স্যাটেলাইট প্রেরন করা হয়।
তথ্য
- মোট স্যাটেলাইট ৩০ টি
- উচ্চতা – ২৩,২২২ কিমি (MEO - Medium Earth Orbit)
- কক্ষপথের কোন (বিষুবরেখার সাথে ) Orbital Inclination : 56° ( 3 Orbital Plane)
- কক্ষপথের পর্যায়কাল – ১৪ ঘণ্টা ৫ মিনিট
- ভু-উপগ্রহ – ২টি (জার্মানি ও ইটালি)
- গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস – অবস্থান ও সময় নির্ণয়
অবস্থান নির্ণয় প্রণালিঃ কিভাবে অবস্থান নির্ণয় করে?
গ্রাহক বা রিসিভার (যেমন, মোবাইল ফোন ) যখন সিগনাল গ্রহন করে , তখন রিসিভার সেই সিগনাল বিশ্লেষণ করে আমাদের অবস্থান জানায়, কিন্তু সেটা কিভাবে হয়। রিসিভার কক্ষপথে অবস্থিত বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে সিগনাল গ্রহন করে। অবস্থান জানার জন্য রিসিভারের তিনটি মৌলিক তথ্য জানা দরকারঃ
১। স্যাটেলাইটের অবস্থান
২। সিগনাল কখন পাঠানো হয়েছিল
৩। এবং সেই সিগনাল ঠিক কখন গ্রাহকের কাছে পৌছায় ।
ব্যপারটা কল্পনা করা যেতে পারে, সুমদ্রের জাহাজের সাথে, যদি আমরা জাহাজের অবস্থান জানি, জানা থাকে যদি জাহাজের আলো ঠিক কখন পাঠানো হয়েছিল এবং আমরা ঠিক কখন সেই আলো বা সিগনাল গ্রহন করি, এইসব তথ্য থেকে আমরা জাহাজের সাপেক্ষ্যে আমাদের দূরত্ব নির্ণয় করতে পারব। অবস্থান নির্ণয়কারি রিসিভার স্যাটেলাইটের সিগনাল পরিমাপ করে ঠিক সেভাবেই আমাদের অবস্থান জানায়।
কিভাবে উপরের তিনটি মৌলিক তথ্য পাওয়া যায়ঃ
১। স্যাটেলাইটের অবস্থানঃ স্যাটেলাইট ও নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র এই তথ্য প্রদান করে।
২। সিগনাল কখন পাঠানো হয়েছিলঃ স্যাটেলাইটের সিগনাল থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়, প্রতি স্যাটেলাইটে আণবিক ঘড়ি রয়েছে, যা অত্যন্ত নিখুত সময় প্রদান করে।
৩। এবং সেই সিগনাল ঠিক কখন গ্রাহকের কাছে পৌছায়ঃ সেই সময় গ্রাহকের রিসিভার থেকে আসে, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যদিও স্যাটেলাইটের ঘড়ি আণবিক ঘড়ি কিন্তু গ্রাহকের রিসিভারের ঘড়ি সাধারন মানের (যেমন, মোবাইল ফোন) এবং নিখুত সময় নির্ণয় করতে পারে না, সেজন্য আরও একটি অতিরক্তি স্যাটেলাইটের সিগনাল প্রয়োজন হয়। কমপক্ষে ৪টি স্যাটেলাইট দরকার হয় অবস্থান পরিমাপ করার জন্য।
বাস্তবে ব্যাপারটা আরেকটু জটিল, কারন কক্ষপথে স্যাটেলাইট সবসময় চলমান, অবস্থান সবসময় পরিবর্তনশীল, যেমন জিপিএস স্যাটেলাইট প্রতি সেকেন্ডে ৩.৯কিমি গতিতে কক্ষপথে চলছে। তাছাড়া বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর সিগনালকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন আয়নস্ফের। এই ধরনের বিভিন্ন বিষয়কে আমল নিয়ে সূক্ষ্মভাবে গননা করে অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
গালিলিও স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমের সার্ভিস
- ওপেন সার্ভিস বা উন্মুক্ত সার্ভিস – এই উন্মুক্ত সার্ভিস যেকোন ব্যাক্তি ব্যাবহার করতে পারবে। এই সার্ভিস প্রায় এক মিটার পর্যন্ত নিখুতভাবে অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম।
- নিখুত নির্ভুলতা সার্ভিস বা High Accuracy Service (HAS) – এই সার্ভিস-এর মাধ্যমে প্রায় ২০ সেমি. পর্যন্ত নিখুতভাবে অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম।
- পাবলিক রেগুলেটেড সার্ভিস Public Regulated Service (PRS) ঃ এই সার্ভিস শুধুমাত্র অনুমুদিত সরকারি ব্যাক্তি ও সংস্থার জন্য সংরক্ষিত ।
- অনুসন্ধান ও উদ্ধার সার্ভিস, Search and Rescue Service
স্যাটেলাইটের প্রধান অংশসমুহ – একটি গালিলিও স্যাটেলাইটে নিম্ললিখিত অংশ নিয়ে তৈরি
- L-Band অ্যান্টেনাঃ ১২০০-১৬০০ মেগা হার্টজ তরঙ্গ বিকিরন করে
- SAR অ্যান্টেনাঃ ভুমি থেকে উদ্ধার সার্ভিস সংস্থার সিগনাল সংরহ করে এবং ভু-উপগ্রহ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।
- C-Band অ্যান্টেনাঃ ভু-উপগ্রহ থেকে সংকেত গ্রহণ করে এই অ্যান্টেনার মাধ্যমে
- S-Band অ্যান্টেনাঃ এই অ্যান্টেনার মাধ্যমে ট্র্যাকিং, টেলি-মেট্রি এবং ভু-উপগ্রহ কমান্ড কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংকেত গ্রহন করে।
- সূর্য ও ভু-সেন্সরঃ সূর্য ও পৃথিবী-সেন্সরের মাধ্যমে কক্ষপথে স্যাটেলাইটের অবস্থান নির্ণয় করে এবং স্যাটেলাইটকে সব সময় পৃথিবীর দিকে তাক করাতে ব্যাবহার করা হয়।
- স্পেস রেডিয়েটারঃ রেডিয়েটার স্যাটেলাইটের বিভিন্ন যন্ত্র থেকে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপ বিকিরনে সহায়তা করে।
এই স্যাটেলাইট ৪ ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যাবহার করে
E5a – কেন্দ্রিয় ফ্রিকোয়েন্সিঃ ১১৭৬.৪৫ মেগা-হার্টজ (MHz)
E5b – কেন্দ্রিয় ফ্রিকোয়েন্সিঃ ১২০৭.১৪ মেগা-হার্টজ (MHz)
E6- কেন্দ্রিয় ফ্রিকোয়েন্সিঃ ১২৭৮.৭৫ মেগা-হার্টজ (MHz)
E1- কেন্দ্রিয় ফ্রিকোয়েন্সিঃ ১৫৭৫.৪২ মেগা-হার্টজ (MHz)
Reference:
1. Galileo General Introduction https://gssc.esa.int/navipedia/index.php/Galileo_General_Introduction
2. Galileo Space Segment https://gssc.esa.int/navipedia/index.php?title=Galileo_Space_Segment
3. Galileo Services https://www.gsc-europa.eu/galileo/services
4. Galileo/ESA https://www.esa.int/Applications/Satellite_navigation/Galileo/What_is_Galileo
5. An intuitive approach to the GNSS positioning https://gssc.esa.int/navipedia/index.php?title=An_intuitive_approach_to_the_GNSS_positioning
Last Update: 10.06.2024