সূর্য

সূর্য একটি নক্ষত্র , সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি গ্যাসীয় গোলাকার পিণ্ড। সূর্যের তাপ এবং শক্তি ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব হত না। সূর্যের মত কোটি কোটি নক্ষত্র মহাবিশ্বে বিদ্যমান। সূর্য পৃথিবীর শক্তির উৎস। 

 

  • প্রয়োজনীয় তথ্য 

  • বর্ণনা

  • সূর্যের সৃষ্টি

  • মিল্কিওয়ে আবর্তন

প্রয়োজনীয় তথ্য

  • সূর্য একটি গ্যাসীয় পিণ্ড। কোন কঠিন পৃষ্ট নেই।

  • ৯২  % হাইড্রোজেন এবং ৭ ভাগ হিলিয়াম রয়েছে।

  • সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে  অবস্তিত এবং সমগ্র সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯ ভাগ শুধুমাত্র সূর্যের।

  • সূর্যের ৮ টি গ্রহ , ৫ টি বামন গ্রহ, কয়েক হাজার উল্কা এবং ধূমকেতু রয়েছে।

  • সূর্যের বলয় নেই।

  • সূর্যের কেন্দ্রের  তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস

  • পৃথিবী থেকে দূরত্ব 149,597,900 km

  • গড় ব্যাসার্ধ   695,508 km

ভর                                                  1,989,100,000,000,000,000,000,000,000,000 kg

ঘনত্ব                                                 1.409 g/cm3

অভিকর্ষ বল                                      274.0 m/s2

বয়স                                                 ৪৬০ কোটি বছর  

পারিপার্শ্বিক নক্ষত্রের সাপেক্ষে গতিবেগ 19.7 km/s

তথ্য সূত্র NASA

সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্তিত , প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন সভ্যতায় সূর্যকে নিয়ে বিভিন্ন রূপকথা প্রচলিত ছিল। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৪ কোটি ৯৬ লক্ষ কিলোমিটার । এই দূরত্বকে জ্যোতির্বিদ্যা-একক বলা হয় । সৌরজগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই দূরত্বকে প্রমাণ মান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রধানত সূর্য আয়নিত গ্যাস দ্বারা গঠিত ।

​স্তর

সূর্যের ৬ টি স্তর বা অঞ্চল রয়েছে,

 ১-  কেন্দ্র The core

 ২ - রেডিও অ্যাক্টিভ অঞ্চল  radio active zone

 ৩ - কনভেক্টিভ অঞ্চল  Convective zone

 ৪ - ফটো স্পেয়ার  Photosphere

 ৫ - ক্রোমো স্পেয়ার Chromosphere

 ৬ - করোনা Corona

 কেন্দ্র Core: কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস , যেটা ফিউশন এর জন্য পর্যাপ্ত। সূর্যের কেন্দ্রে উৎপাদিত এই তাপ বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে পৃথিবীতে আসে এবং এটাই প্রাণের উৎস।

কেন্দ্রও থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, কেন্দ্রও থেকে convection zone যেতে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার বছর সময় নেয়। এই স্তরে তাপমাত্রা ২০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস মত থাকে। convective zone এ উত্তপ্ত প্লাজমা (আয়নিত পরমাণু কণা  )  উপরের দিকে উঠতে থাকে।

 

সৌর পৃষ্ঠ - Photosphere - এই স্তরের পুরুত্ত প্রায় ৫০০ কিলোমিটার । এই স্তরের বিকিরিত আলোই পৃথিবীতে সূর্যের আলো হিসেবে পৃথ্বী পৃষ্টে আসে। সূর্য  থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে প্রায় ৮ মিনিট সময় নেয়।

সৌর চিহ্ন photoshere এর কিছু এলাকায় অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বকীয় ফিল্ডের জন্য তাপমাত্রা কম থাকে এবং পারিপার্শ্বিক এলাকার সাপেক্ষে অপেক্ষাকৃত কম আলোকিত দেখা যায়।  এই স্তরের তাপমাত্রা প্রায় ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ।

 

Photosphere এর উপরের স্তর যথাক্রমে Chromosphere এবং Corona. Photosphere এর অত্যন্ত উজ্জল আলোর জন্য সাধারণত দৃশ্যমান হয় না। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় যখন চাঁদ সূর্যের Photosphere আড়াল করে তখন Chromosphere  এবং Corona দৃশ্যমান হয়।

সূর্যের সৃষ্টি

কিভাবে সূর্য সৃষ্টি হল

সূর্য হলুদ বামন নক্ষত্র প্রজাটির একটি তারা। আনুমানিক ৪৫০ কোটি বছর আগে সূর্যের সৃষ্টি হয়।

 

মহাশূন্য আসলে সম্পূর্ণ শূন্য নয়, এটা গ্যাস এবং বালুকণা দিয়ে পরিপুর্ন।  মহাশূন্যের অধিকাংশ উপাদান  হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম , অল্পকিছু রয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষের ভারি উপাদান। অভিকর্ষের কারণে উপাদানগুলু একত্রিত হতে থাকে এবং অভিকর্ষ বলের কারণে ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। এই সকল উপাদান কেন্দ্রে জমা হতে থাকে এবং তৈরি করে শিশু-নক্ষত্র এবং পরবর্তী কালে যা পূর্ণ নক্ষত্রে পরিণত হয়।

নতুন শিশু নক্ষত্রে প্রধানত  হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম উপাদান থাকে কিন্তু তখনও পারমানবিক ফিউশন প্রক্রিয়া সুরু হয়নি। পরবর্তী ৫০ লক্ষ বছরে প্রচণ্ড চাপ এবং তাপের কারণে ফিউশন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং এখনো চলমান।  সূর্য সৌরজগতের সব উপাদান নিয়ে তৈরি হয় নি, বাদ বাকি উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে গ্রহ , উপগ্রহ, ধূমকেতু, উল্কা ইত্যাদি। আকারের দিক থেকে সূর্য সাধারণ মানের নক্ষত্র , খুব বড় বা ছোট নয়।

ভবিষ্যৎ

কয়েক মিলিয়ন বছর পর, সূর্যের অভ্যন্তরের সব হাইড্রোজেন ফিউশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হবে এবং নতুন করে জালানি  হিসেবে হাইড্রোজেন আর থাকবে না।  ব্যাসার্থ পৃথিবীর কক্ষপথ গ্রাস করবে , এই পর্যায়ের সূর্যকে লাল দানব বলে(red giant) । আস্তে আস্তে সূর্যের অভ্যন্তরে  হিলিয়াম নিঃশেষ হবে , ধীরে ধীরে সূর্য একটি নিষ্প্রভ নক্ষত্র হয়ে থাকবে, এই পর্যায়ে  সাদা দানব (white dwarf) তারা হিসেবে থাকবে।

মিল্কিওয়ে আবর্তন

 সূর্যের নিজস্ব গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে এবং মিল্কিওয়ে গালাক্সিরর কেন্দ্র থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ২৫,০০০ থেকে ২৮,০০০ আলোক বর্ষ।

 গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রতি ২২-২৫ কোটি বছরে একবার পূর্ণ আবর্তন করে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রের সাপেক্ষে সূর্যের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২৫১ কিমি। সূর্যের বয়স ও মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আবর্তন হিসেবে করলে দেখা যায়, সূর্য এখন পর্যন্ত গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে ২০-২৫ বার পুর্ন আবর্তন করেছে। আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে একটি সর্পিলাকার গ্যালাক্সি, বিভন্ন বাহু রয়েছে, সূর্যের অবস্থান অরিয়ন বাহুতে (চিত্র) ।  বিজ্ঞানীদের মতে সূর্যের অবস্থান গ্যালাক্সির বাসযোগ্য  অঞ্চলে, গ্যালাক্সির কেন্দ্রের খুব কাছেও (খুব কাছে থাকলে কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় প্রভাব থাকবে )  নয় আবার খুব দুরেও না।