মঙ্গল গ্রহ


সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ, মঙ্গলের সাথে পৃথিবীর বেশ কিছু মিল আছে, যেমন মঙ্গলে ঋতু আছে, আগ্নেয়গিরি ও জলবায়ু আছে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা।

মঙ্গল একমাত্র গ্রহ যা এই মুহূর্তে রোবটদের দখলে। গ্রহের লালচে রঙের জন্য অতীতে অনেক সভ্যতা এই গ্রহকে যুদ্ধ বা রাগের সাথে তুলনা করতো। পৃথিবীর প্রতিবেশী বলে মানুষের চোখে সবসময় মঙ্গলকে নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল এবং আছে, অনেকেই মনে করেন, ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহ হবে আমাদের ঠিকানা। মঙ্গল গ্রহে সবচেয়ে বেশি নভোযান আবতরন করেছে এবং বেশ কিছু নভোযান কক্ষপথে পরিভ্রমন করছে। পৃথিবী থেকে মঙ্গল যাত্রা সময় লাগে প্রায় ৭ মাস , যদিও অবতরনের জন্য আর বেশি সময় লাগে।  রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চিন – মাত্র এই তিনটি দেশ মঙ্গল গ্রহে নভোযান  সফলভাবে অবতরন করাতে সক্ষম হয়েছে। অবতরন ছাড়াও এই মুহূর্তে বেশ কিছু অরবিটার মিশন চলমান, যেমন ইউরোপ-এর “মার্স এক্সপ্রেস” , ভারতের “ মঙ্গলায়ান ” ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের “হোপ” উল্লেখযোগ্য।


তথ্য

  • চতুর্থ গ্রহ

  • সূর্য থেকে দূরত্ব ২২.৮ কোটি কিমি

  • মঙ্গলের ১ দিন ২৪ ঘণ্টা থেকে কিছু বেশি ( নিজের অক্ষে একবার আবর্তন )

  • মঙ্গল  প্রস্তরাকীর্ণ গ্রহ

  • বায়ুমণ্ডলের উপাদান কার্বন -ডাই -অক্সাইড , নাইট্রোজেন , আর্গন

  • ২ টি উপগ্রহ , ফোবস ও ডিমোস

  • লাল গ্রহ, লৌহ আকরিকের মরিচার জন্য গ্রহকে লাল দেখায় ।

মঙ্গল পৃথিবীর আকারের প্রায় অর্ধেক । মঙ্গলের ২টি উপগ্রহ রয়েছে, ধারনা করা হয় উপগ্রহদ্বয় গ্রহাণু ছিল আগে , মঙ্গলের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে বাধা পড়ে উপগ্রহে পরিণত হয়েছে। ফোবস মঙ্গলের নিকটবর্তি উপগ্রহ।

পৃথিবীর মত মঙ্গলেও ঋতুর দেখা মেলে, কক্ষপথের সাথে মঙ্গলের নিজের অক্ষের হেলানো কোণের জন্য এমনটি হয়। মঙ্গলের মেরু অঞ্চলের বরফ ঋতু পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়। মঙ্গলের অগ্নিগিরি প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগেও সজীব ছিল। অলিম্পাস মন্স সৌরজগতের সবচেয়ে বড় অগ্নিগিরি।

 বিজ্ঞ্যানীরা ধারনা করেন মঙ্গলে ৩৫০ কোটি বছর পুর্বে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল । যদিও নিশ্চিত নয় , এই পানির উৎস কোথায় অথবা কতদিন স্থায়ী ছিল এবং এই পানি কোথায় গেল। ২০০২ সালে নাসা প্রেরিত মার্স ওডিসি   (Mars Odyssey) মঙ্গলের মেরুতে হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ উপাদান সনাক্ত করে। অধিকতর পর্যবেক্ষণে হাইড্রোজেন উপাদান অন্যান্য অঞ্চলেও পাওয়া যায়। যদি বরফ ভুপৃষ্টের প্রবেশ করে , তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জমাট বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৪ সালে মঙ্গলের মহাকশযান Opportunity মঙ্গলে এমন ধরনের খনিজ খুঁজে পায় যে থেকে ধারনা করা যায় একসময় তরল পানি ছিল পৃষ্টে।  মঙ্গলের ঠাণ্ডা তাপমাত্রা ও পাতলা বায়ুমণ্ডলের কারণে তরল পানি ভুপৃষ্টে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না।

 ২০০৮ সালে  নাসা প্রেরিত Phoenix তুষারপাত পর্যবেক্ষণ করে।  বিজ্ঞ্যানিদের ধারনা অতীতে ফনিক্স ল্যান্ডিং সাইট আদ্র ছিল।

Referance: ESA http://sci.esa.int/mars-express/31031-phobos/

মঙ্গলে পানির অস্তিত্ব

বাহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা আনুমান করছিলেন যে মঙ্গল গ্রহে পানি রয়েছে, বিভিন্ন মিশনের তথ্য দেখে এখন নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে মঙ্গলে সত্যি পানি রয়েছে, তবে এই পানি তরন নয়, কঠিন বরফ পাওয়া গিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিন মেরুতে বরফের অস্তিত্ব সনাক্ত করা গিয়েছে, এমনকি বিষুবরেখা এলাকার ছোট খাদ বা গর্তে বরফের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। ধারনা করা হয়, মঙ্গলে একসময় অনেক পানি ছিল, পৃথিবীর মতই ছিল সাগর, নদী কিন্তু কোন আজানা কারনে প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে পানি ও বায়ুমণ্ডল হারায়।

উল্লেখযোগ্য মঙ্গল মিশন

মার্স -২ ঃ ১৯৭১ সাল, রাশিয়া

ভাইকিং – ১ঃ ১৯৭৫ সাল, যুক্তরাষ্ট্র

MRO (Mars Reconnaissance Orbiter): ২০০৫ সাল, যুক্তরাষ্ট্র – এখনো চলমান

Curiosity – ২০১১ সাল, যুক্তরাষ্ট্র  

Mars Orbiter Mission – ভারত, ২০১৩ সাল

Hope – সংযুক্ত আরব আমিরাত , ২০২০ সাল

Tianwen-1 – চিন, ২০২০ সাল

Mars 2020 / Ingenuity – ২০২০ সাল , যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গল গ্রহে প্রথম সফল হেলিকপ্টার মিশন।

চিত্র – মঙ্গলের খাদ (Credit: ESA Mars Express)

চিত্র – মঙ্গলের উত্তর মেরুতে বরফ (Credit: NASA)