গ্যানিমিড

গ্যানিমিড – বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ও সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ, আকারে আমাদের চাঁদ থেকে বেশ বড়, এমনকি বুধ গ্রহ থেকেও বড়। আপাত দৃষ্টিতে গ্যানিমিডকে নির্জীব, বিরান মনে হলেও তার রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য যেমন একমাত্র উপগ্রহ যার রয়েছে নিজস্ব চৌম্বকক্ষেত্র , ধারনা করা হয় গ্যানিমিডের পৃষ্ঠের নিচে রয়েছে গভীর সমুদ্র যার গভীরতা প্রায় ১৫০ কিমি এবং পানির পরিমান পৃথিবীর পৃষ্ঠের পানির চেয়েও বেশি। ।

চিত্রঃ সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ গ্যানিমিড, হাবল টেলিস্কোপ থেকে তোলা ছবি। নীল রঙের অংশ মেরুপ্রভা (নীল অংশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করা) Credit: NASA/ESA

আবিস্কারঃ

১৬১০ সালে ইতালির বিখ্যাত বিজ্ঞানী গালিলিও গালিলি টেলিস্কোপ দিয়ে বৃহস্পতি গ্রহের চারটি উপগ্রহ সনাক্ত করেন, পরে বুঝতে পারেন যে এই এই বস্তুগুলো আসলে বৃহস্পতি গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। তারা আগে অনেকেই বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বের সবকিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে, কিন্তু গালিলিওর এই আবিষ্কার তৎকালীন সেই ধারনা ভেঙ্গে দেয়। গালিলিওর আবিষ্কার করা সেই চারটি উপগ্রহ হলো গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো, আইও ও ইউরোপা। গালিলিওর সম্মানে এই চারটি উপগ্রহকে গালিলিওর উপগ্রহ বলেও অবিহিত করা হয়। যদিও গালিলিও এই বস্তুগুলোকে বলেছিলেন “মেডিছি তারা” কিন্তু পরবর্তীতে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সাইমন মারিয়াস রোমান পৌরানিক চারিত্রের নামে উপগ্রহগুলোর নাম রাখেন।

গঠন

গ্যানিমিডের ভুস্তরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, কেন্দ্র, সিলিকা ম্যান্টল ও বরফের ভূপৃষ্ঠ। কেন্দ্র অর্ধ-গলিত লোহা ও নিকেলের সংমিশ্রণ।  লৌহ-নিকেলের এই মিশ্রণই এই উপগ্রহের চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্য গ্যানিমিডে আরোরা বা মেরুপ্রভা দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে নাসার গালিলিও নভোযান থেকে মেরুপ্রভা সনাক্ত করা হয়। কেন্দ্রের উপরে রয়েছে সিলিকার ম্যান্টল, এই অংশের মুল উপাদান সিলিকা মিশ্রিত শিলা। ম্যান্টলের উপরে রয়েছে ভূপৃষ্ঠ, এর মুল উপাদান বরফ তবে পৃষ্ঠের নিচে ধারনা করা হয় রয়েছে লবণাক্ত পানির তরল সাগর, যার গভীরতা প্রায় ১০০ কিমি। তবে গ্যানিমিডের পৃষ্ঠ শিলার নয়, সেটাও বরফের পৃষ্ঠ । পৃথিবীর মহাসাগরের গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ-এর গভীরতা মাত্র ১০ কিমি।  ২০২১ সালে নাসার নভোযান জুনো গ্যানিমিডের ভূপৃষ্ঠে খনিজ-লবন ও জৌব-যৌগ সনাক্ত করে।

চিত্রঃ গ্যানিমিডের পৃষ্ঠ, নাসার জুনো মিশন থেকে তোলা ছবি। Credit: NASA

গ্যানিমিডের বায়ুমণ্ডল আছে, তবে অত্যন্ত হালকা ও বায়ুর চাপ অনেক কম, মাত্র ০.২ মাইক্রো-প্যাসকেল। বায়ুমণ্ডলের মুল উপাদান অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও কিছুটা ওজোন গ্যাস , তবে বায়ুর চাপ অত্যন্ত কম থাকায় এই বায়ুর চাপে নিশ্বাস নেয়া সম্ভব হবে না। হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে এই অক্সিজেন সনাক্ত করা হয়েছে, ধারনা করা হয় অক্সিজেনের উৎস গ্যানিমিডের বরফের পৃষ্ঠ। গ্যানিমিডে সূর্যের আলো খুবই কম, পৃথিবীর মাত্র ৩০ ভাগের এক ভাগ, দিনের বেলা তাপমাত্রা -১১২ C ও রাতের তাপমাত্রা -১৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বায়ুমণ্ডলের অভাবে (অত্যন্ত অল্প)  এই উপগ্রহ তাপ ধরে রাখতে পারে না।   

গ্যানিমিড আকারে সবচেয়ে বড় উপগ্রহ, ব্যাসার্ধ ২৬৩১ কিমি (আকারে বুধ গ্রহ ও প্লুটো থেকেও বড়) এবং বৃহস্পতি গ্রহ থেকে ১০ লক্ষ ৭০ হাজার কিমি দূর থেকে আবর্তন করে। সূর্য থেকে আলো পৌছাতে সময় নেয় প্রায় ৪৩ মিনিট।

কক্ষপথ

আগেই বলা হয়েছে গ্যানিমিড বৃহস্পতি গ্রহ থেকে প্রায় ১০ লক্ষ কিমি দূর থেকে আবর্তন করে, প্রতি ৭ দিনে গ্যানিমিড বৃহস্পতি গ্রহকে একবার প্রদক্ষিন করে। গ্যানিমিড টাইডালী-লকড মানে , শুধু মাত্র একদিক বৃহস্পতি গ্রহের দিকে মুখ করে থাকে, অনেকটা আমাদের চাদের মত।

চিত্রঃ গ্যানিমিডের গঠন। Credit: NASA, ESA, and A. Feild (STScI)

চিত্রঃ গ্যানিমিড উপগ্রহ , নাসার জুনো মিশন থেকে তোলা ছবি। Credit: NASA

মিশনঃ

এখনো পর্যন্ত বেশ কিছু নভোযান বৃহস্পতি গ্রহে গবেষণার জন্য পাঠানো হয়েছে, যেমন

১৯৭৩ সালে Pioneer 10 & Pioneer 11 – ফ্লাই-বাই, পাস দিয়ে উড়ে যাওয়া

১৯৭৯ সালে Voyager 1 & Voyager 2 - ফ্লাই-বাই

১৯৯৫-২০০৩ সাল - গালিলিও নভোযান , একটি সফল মিশন, এই মিশনের মাধ্যমে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

২০০৭ সাল - New Horizons, ফ্লাই-বাই

২০১৬ সাল- জুনো , আরেকটি সফল ও গবেষণাধর্মী মিশন, এই মিশনের মাধ্যমে বৃহস্পতি গ্রহ ও উপগ্রহের গঠন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

ভবিষ্যৎ মিশনঃ

JUICE (Jupiter Icy Moons Explorer) – European Space Agency (ESA) – ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু , ২০৩০ সালে বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়।

Europa Clipper (NASA) – ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা।

Published date: 7/10/2024

Bibliography:

[1] “Ganymede: Facts - NASA Science.” Available: https://science.nasa.gov/jupiter/moons/ganymede/facts/. [Accessed: Oct. 07, 2024]

[2] “Ganymede May Harbor ‘Club Sandwich’ of Oceans and Ice,” NASA Jet Propulsion Laboratory (JPL). Available: http://www.jpl.nasa.gov/news/ganymede-may-harbor-club-sandwich-of-oceans-and-ice/. [Accessed: Oct. 07, 2024]

[3] “Spotlight on Ganymede, Juice’s primary target.” Available: https://www.esa.int/Science_Exploration/Space_Science/Juice/Spotlight_on_Ganymede_Juice_s_primary_target. [Accessed: Oct. 07, 2024]