বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা : প্রাণ ধারণের কি উপযোগী ?

বৃহস্পতি গ্রহের এই উপগ্রহ বিজ্ঞানীদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু , আলোচনা থাকার কারণও রয়েছে, ধারনা করা হয়, এই উপগ্রহের ভিতর রয়েছে তরল সাগর। তরল সাগর প্রাণ ধারণের একটি আবশ্যিক উপাদান পৃথিবীতে, তাহলে কি এই উপগ্রহেও সম্ভব প্রাণ ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

প্রান ধারনের জন্য তিনটি জিনিস প্রয়োজনীয়ঃ তরল পানি , রাসায়নিক উপাদান এবং শক্তির উৎস। ইউরোপার পৃষ্ঠ বরফে ঢাকা, ১৫-২৫ কিমি পুরু বরফের নিচে লোনা পানির সাগর রয়েছে বলে আনুমান করা হয়। প্রান বিকাশের জন্য দরকার সময়, ইউরোপার সাগর হয়ত রয়েছে সেই সৌরজগতের শুরু থেকে, প্রায় ৪০০ কোটি বছর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বৃহস্পতির এই উপগ্রহে হয়ত অত্যন্ত ছোট আকারের প্রান থাকা সম্ভব। ইউরোপায় প্রচুর পানি রয়েছে এবং রয়েছে গুরুত্তপুর্ন রাসায়নিক উপাদান – যেমন, কার্বন, হাইড্রোজেন , নাইট্রোজেন, ফসফরাস , সালফার ইত্যাদি। অন্য উপাদান হলো শক্তির উৎস, যেমন পৃথিবীতে সূর্য সকল শক্তির উৎস। আর ইউরোপার শক্তির উৎস হতে পারে রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং হয়ত বরফের নিচে থাকতে পারে।

 

আবিষ্কার

ইটালিয়ান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই  ১৬১০ সালের ৮ই জানুয়ারী এই উপগ্রহ সনাক্ত করেন। ইউরোপা ছাড়াও আরও ৩টি বৃহস্পতির উপগ্রহ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সনাক্ত করেন তিনি। এই পর্যবেক্ষণ আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য একটি মাইলফলক, এই পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয়, সৌরজগতের গ্রহ সমূহ আসলে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে না, বরং সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে এবং উপগ্রহ গুলু গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরে। তার আগে ধারনা করা হত, মহাবিশ্বের সব কিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে এবং পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্তিত। তৎকালীন সময়ের সেই ধারনা ভাঙ্গতে এই পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, একই সাথে বলা উচিত, গ্যালিলিওর শুক্র গ্রহের পরিক্রমা পর্যবেক্ষণও সূর্যকেন্দ্রিক নতুন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখে।


তথ্য-কণিকা

  • ইউরোপা বৃহস্পতি গ্রহের একটি উপগ্রহ

  • আকারে আমাদের চাঁদ থেকে সামান্য ছোট, ব্যাসার্ধ ১৫৬০ কিমি

  • ১ দিনের (এবং রাতের) দৈর্ঘ্য - ইউরোপা নিজের অক্ষে একটি পুর্ন আবর্তন করতে প্রায় ৩.৫ দিন সময় নেয়।

  • ইউরোপা এবং বৃহস্পতি টাইডাল লকড, মানে এক দিক সব সময় বৃহস্পতির দিকে মুখ করে থাকে। (আমাদের চাঁদের মত)

  • ইউরোপার পৃষ্ঠ বরফাচ্ছিন্ন । এই পৃষ্ঠের নিচে ধারনা করা হয় রয়েছে লবণাক্ত তরল সাগর।

  • বৃহস্পতি থেকে গড় দূরত্ব ৬৭০৯০০ কিমি।

  • পৃষ্ঠের তাপমাত্রাঃ  নিরক্ষরেখা এলাকায়  প্রায় -১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মেরু এলাকায় -২২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

উপগ্রহের ভৌত বৈশিষ্ট্য

ইউরোপার পৃষ্ঠ মসৃণ, উজ্জ্বল এবং লম্বা এলোমেলো ফাটলের দাগ রয়েছে। সূর্য থেকে দূরত্বের কারণে এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডার জন্য ইউরোপার পৃষ্ঠ জমে বরফে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বরফের পৃষ্ঠের নিচে লবণাক্ত তরল সাগর থাকার পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ইউরোপার কেন্দ্রে লোহা দিয়ে গঠিত, অনেকটা পৃথিবীর মত। যদিও পৃষ্ঠের নিচে সাগর থাকার পক্ষে পরোক্ষ প্রমাণ রয়েছে কিন্তু শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও পরীক্ষা ও মিশন দরকার।

ইউরোপা বৃহস্পতি গ্রহকে ঠিক বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে না, ইউরোপার কক্ষপথ সব সময় পরিবর্তিত হয়। বৃহস্পতির মহাকর্ষ বল ইউরোপার কাছের অংশে বেশি এবং দুরের পাশে কম (জোয়ার - ভাটার মত)  , এই পার্থক্য ইউরোপার আবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। এই বলের পার্থক্যের জন্য ইউরোপার পৃষ্ঠে লম্বা ফাটল  তৈরি হয়েছে। যদি সত্যি ইউরোপার বরফের নিচে সাগর থেকে থাকে, তাহলে এই জোয়ার-ভাটার টানের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে আগ্নেয়গিরিতুল্য সক্রিয়তা বা হাইড্রো-থার্মাল ক্রিয়া সম্ভব, এই ক্রিয়ার কারণে অত্যন্ত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান সমুদ্রে উৎপন্ন হতে পারে যা কিনা প্রাণ ধারণের জন্য উপযোগী।

২০১৩ সালে নাসা হাবল টেলিস্কোপ থেকে পর্যবেক্ষণে দেখতে পায়, ইউরোপা থেকে জলীয় বাষ্পের উদ্গিরন হচ্ছে, এই পর্যবেক্ষণে বুঝা যায় ভূতাত্ত্বিকভাবে ইউরোপা এখনো সক্রিয়।

সাগর

গালিলিও মিশনে দেখা যায়, বৃহস্পতি গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র ইউরোপার আসে পাশে বিঘ্নিত হয়, এই বিঘ্ন হওয়ার একটি কারণ হতে পারে পৃষ্ঠের নিচে থাকা লবণাক্ত সাগর। যদিও এই ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি । ভবিষ্যতের মিশনের মাধ্যমে আরও প্রমাণ পাওয়ার আশা রয়েছে।

মিশন

  • ভয়েজার -১ , ২

  • গ্যালিলিও

বিস্তারিত গবেষণা করার জন্য ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে “ইউরোপা ক্লিপার” নামে নতুন নভোযান পাঠাবে নাসা। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত এই স্যাটেলাইট ইউরোপার বায়ুমণ্ডল, ভূপৃষ্ঠের উপর গবেষণা চালাবে। গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য হল, এই উপগ্রহে প্রানের অস্তিত্ব আছে কিনা অথবা থাকা সম্ভব কিনা, এই বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা।

Reference 

  1. Europa, NASA. http://solarsystem.nasa.gov/planets/europa

  2. Europa indepth, NASA. http://solarsystem.nasa.gov/planets/europa/indepth

  3. Europa Moon, NASA. https://www.nasa.gov/subject/3148/europa-moon/

  4. Water Plumes eruption on jupitar moon europa, NASA. https://www.nasa.gov/press-release/nasa-s-hubble-spots-possible-water-plumes-erupting-on-jupiters-moon-europa

  5. Jupitar Moon Europa, phy.org. https://phys.org/news/2016-09-nasa-reveal-jupiter-moon-europa.html

  6. Europa, BBC. http://www.bbc.co.uk/science/space/solarsystem/moons/europa_(moon)

  7. Europa, Smithsonian National Air and Space Museum. https://airandspace.si.edu/exhibitions/exploring-the-planets/online/solar-system/jupiter/europa.cfm

  8. NASA. https://www.nasa.gov/feature/jpl/europas-ocean-may-have-an-earthlike-chemical-balance

  9. Picture of Jupiter Moon, wikipedia. By User:Matma Rex - based on earlier version of this file, avail. below, Public Domain, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=1334890

  10. Europa, NASA. http://solarsystem.nasa.gov/planets/europa/needtoknow

  11. Jupiter's moon Europa, published 30.09.2015. phy.org
    https://phys.org/news/2015-09-jupiter-moon-europa.html

  12. https://science.nasa.gov/jupiter/moons/europa/facts/

Published date: 18.02.2017