পৃথিবী

নীল এই গ্রহ, অতি সাধারন, মাঝারি আকারের। রয়েছে বায়ুমণ্ডল, রয়েছে সাগর, ঢেউ , বাতাস , ঝড় বৃষ্টি , আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি ।  কিন্তু এই সাধারন এই গ্রহের রয়েছে আসাধারন বিশিষ্ট, একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রান ধারনের অনুকল। পৃথিবী সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ, পৃথিবীর কক্ষপথের এই এলাকা গল্ডিলক এলাকা হিসেবে পরিচিত, এই এলাকার তাপমাত্রা খুব বেশি হয় না, আবার খুব পরম শীতলও হয় না, মোটামুটি আদর্শ এলাকা বলা যেতে পারে।

বর্ণনা

দূরত্বের দিক থেকে পৃথিবী তৃতীয় এবং আকারের দিক থেকে পঞ্চম গ্রহ । পৃথিবীর নিজের অক্ষ  , পৃথিবী - সূর্যের কক্ষ তলের সাথে ২৩.৪৫ ডিগ্রি কোণে অবস্তান করে। যা ঋতু পরিবর্তনের কারণ। বছরের একটা সময় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তখন উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল । ছয় মাস পর উল্টা ঘটনা ঘটে , দক্ষিণ গোলার্ধ তখন সূর্যের দিকে হেলে থাকে।

পৃথিবীর মোট পৃষ্টের সমুদ্র প্রায় ৭০% ,গড় গভীরতা প্রায় ৪ কিলোমিটার । পৃষ্টের কাছের বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৮% নাইট্রোজেন , ২১ শতাংশ অক্সিজেন , বাকি ১ শতাংশ অন্যান্য । এই বায়ুমণ্ডল জলবায়ু ও আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। পৃথিবীর  বায়ুমণ্ডল সূর্যের থেকে আসা ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয়তা  থেকে রক্ষা করে, তাছাড়া উল্কার আঘাত থেকে রক্ষা করে, অনেক ক্ষেত্রে পৃথিবী পৃষ্টে পতনের পুর্বেই বায়ুমণ্ডলের সাথে সংঘর্ষে উল্কা ভস্মীভূত হয়।

 

পৃথিবীর দ্রত ঘূর্ণন এবং নিকেল - লোহার কেন্দ্রের কারণে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র আছে, এই চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীকে ক্ষতিকারক সৌর বায়ু থেকে রক্ষা করে  ( সৌর বায়ু - সূর্য থেকে আসা চার্জিত কণা ) । এই সৌরবায়ু পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্য আটকা পরে এবং বায়ুমণ্ডলের উপর কণার সাথে সংঘর্ষের কারণে একটি আভার সৃষ্টি হয়। এই আভাকে বলে অরোরা।

পৃথিবী সৃষ্টিতত্ত্ব

পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ কোটি বছর, প্রাথমিক অবস্থায় পৃথিবী আজকের মত মোটেও ছিল না, বরং অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল ও সমগ্র পৃথিবী ছিল গলিত পিণ্ড, বিরূপ অবস্থার কারণে সেই প্রেক্ষাপটে কোন প্রাণের অস্তিত্ব ছিল অসম্ভব।

সৌরজগত সৃষ্টি হয়েছিল মহাজাগতিক গ্যাস ও ডাস্ট/ ধূলিকণা থেকে , প্রথমে কেন্দ্রে অধিকাংশ উপাদান নিয়ে তৈরি হয় সূর্য এবং গ্রহরাজি তার চারিপাশে সৃষ্টি হয়। প্রথম ৪ টি অভ্যন্তরীণ গ্রহ  (ইনার  প্ল্যানেট Mercury, Venus,Earth and Mars) সৃষ্টি হয়, ধুলি কনা এবং বিভিন্ন শিলার পরিবৃদ্ধির (accretion) ফলে।

কম্পিউটার সিমুলেশনে গ্রহ পরিবৃধির ৩ টি ধাপ/পর্যায় দেখা যায়,

প্রথম ধাপে, ধূলিকণা গুলো একটা আরেকটার সাথে আটকে বড় বস্তু গঠন করে, এই অবস্থায় নিজের মহাকর্ষ বলের ক্ষেত্রে অন্য বস্তুকে আকর্ষণের ক্ষমতা থাকে। এই পর্যায়ে তার আকার মোটামুটি গ্রহাণুর মত।

দ্বিতীয় ধাপে, অত্যন্ত দ্রুত বস্তুর আকার বাড়তে থাকে, যাদের আকার চাদের চেয়েও বেশি। প্রথম ধাপ থেকে দ্বিতীয় ধাপে যেতে মাত্র ১০ লক্ষ বছরের মত সময় লেগেছিল।

তৃতীয় ধাপে, এই বস্তুগুলো একটা আরেকটার সাথে সংঘর্ষের ফলে বড় গ্রহের সৃষ্টি হয়। সিমুলেশনে দেখা যায়, তৃতীয় ধাপ সম্পন্ন হতে প্রায় ১০-২০ কোটি বছর সময় লেগেছিল।

গ্রহ গঠিত হাওয়ার সময়কাল 

সৌরজগত, গ্রহ এবং বিভিন্ন শিলার বয়স কিছু মৌলের আইসোটোপ থেকে নির্ণয় করা সম্ভব। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে স্তিতিশিল আইসোটোপে পরিণত হয়। সৌরজগতের সবচেয়ে আদি কঠিন বস্তু গঠিত হয়েছে তা হল  CAI (Calcium-Aluminum-rich Inclusion), CAI বয়স ৪৫৬.৬ কোটি বছর, যা কিনা পৃথিবী ও চাঁদ সৃষ্টি হাওয়ারও ৫ থেকে ১০ কোটি বছর আগের।

 গঠনঃ

ভূত্বক  (crust)ঃ শিলাময় বাইরের অংশ, এই স্তর অনেক পাতলা। ভূত্বকের গঠন প্রধানত ব্যাসাল্ট ও গ্রানাইটের দ্বারা। মহাদেশের ভূত্বক প্রায় ৩০ কিমি গভীর, অন্যদিকে মহাসাগরের ভূত্বকের অনেক পাতলা, ৮ থেকে ১০ কিমি এর মত। ওই অংশেই রয়েছে টেকটনিক প্লেট।

ম্যান্টেলঃ ভূত্বকের নিচের স্থরে রয়েছে ম্যান্টেল, গভিরতা প্রায় ২৯০০ কিমি। এই অংশে উচ্চ তাপের কারনে শিলা অর্ধ-গলিত অবস্থায় থাকে। ভূত্বক ও  ম্যান্টেলের উপরিভাগ নিয়ে গঠিত হয় লিথোস্ফেয়ার, যা বিভিন্ন ছোট বড় অংশে বিভিক্ত থাকে। এই অংশগুলোকে  টেকটনিক প্লেট বলে।

কেন্দ্রঃ  ম্যান্টেলের নিচের  স্তর পৃথিবীর কেন্দ্র, গভিরতা প্রায় ৩৪৭০ কিমি। গলিত শিলা, নিকেল, লোহা দিয়ে কেন্দ্র গঠিত। কেন্দ্রের দুটি স্তর রয়েছে, বাইরের দিকে বহিঃকেন্দ্র , যা মুলত তরল শিলা দ্বারা গঠিত, আর ভিতরে রয়েছে অন্তঃকেন্দ্র যা কঠিন। বাইরের দিকের তরল কেন্দ্র ভিতরের কঠিন অন্তঃকেন্দ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তরল কেন্দ্রের এই গতি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে।

চিত্রঃ এপোলো -১১ মিশনে চাঁদ থেকে  তোলা পৃথিবীর ছবি।  

উপগ্রহঃ

আমরা সবাই জানি পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ। চাঁদ শুধু দৃষ্টিনন্দন ও স্নিগ্ধ আলোই দেয় না, পৃথিবীর আজকের স্থিতিশীল অবস্থার জন্য চাদের ভুমিকা অনেক। চাদের জন্যই পৃথিবী তার অক্ষপথে স্থিতিশীল ভাবে আবর্তন করে, যার ফলাফল স্বরূপ পৃথিবী পেয়েছে সহনশীল জলবায়ু। চাদের ব্যাস ১৭৩৮ কিমি এবং পৃথিবী থেকে ৩৮৪,০০০ কিমি দূরে অবস্থিত। চাঁদ সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ।

Last Update: 03/06/2024

তথ্যসুত্রঃ

 [1] “Earth - NASA Science.” Available: https://science.nasa.gov/earth

[2] “The Earth’s Structure.” Available: https://www.gsi.ie/en-ie/education/our-planet-earth/Pages/The-Earth-structure.aspx.

[3] “Structure of the Earth - The Earth and atmosphere - KS3 Chemistry,” BBC Bitesize. Available: https://www.bbc.co.uk/bitesize/articles/z9qpsk7.

[4] “Power of Plate Tectonics: Structure of Earth | AMNH,” American Museum of Natural History. Available: https://www.amnh.org/explore/ology/earth/power-of-plate-tectonics.